রাউটারের পেছনে ইউ-এস-বি পোর্টকে কাজে লাগিয়ে NAS অথবা ক্লাউড স্টোরেজ তৈরি!
আমাদের প্রায় সকলের বাসায় ওয়াইফাই রাউটারের পেছনে ইউ-এস-বি পোর্ট রয়েছে। মাঝেমধ্যে অনেকেই সেটায় পেন ড্রাইভ ঢুকিয়ে গুতাগুতি করেন। বাট, একটু স্মার্টলি এটাকে ব্যবহার করলে আপনিও একটি পেন ড্রাইভ বা হার্ড ড্রাইভ দিয়ে নিজস্ব এবং নিরাপদ ফ্রী ক্লাউড স্টোরেজ বানিয়ে নিতে পারবেন যা শুধুমাত্র আপনার বাসার ওয়াইফাই রাউটারে কানেক্ট থাকা ডিভাইস থেকে কানেক্ট করা যাবে এবং ইউজার পাসওয়ার্ড দিয়েও প্রোটেক্ট করা যাবে।
এটিকে NAS - নেটওয়ার্ক এটাচড স্টোরেজ বলা যেতে পারে, যেহেতু একটি স্টোরেজ ডিভাইস (পেন ড্রাইভ) আর একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস (রাউটার) কানেক্ট থাকছে একটি নির্দিষ্ট নেটওয়ার্ক এর আন্ডারে এবং যখন এটি সকল ডিভাইস থেকে একসেস করা যাবে, তখন এটিকে পার্সোনাল তথা প্রাইভেট ক্লাউড স্টোরেজ ও বলা যাবে।
[আমার বানানো পূর্বের পিউর NAS সারভার উইথ CentOS তথা লিনাক্স বেজড অপারেটিং সিস্টেম এবং রাসবেরি পাই দিয়ে! চাইলে এটি সম্পর্কে জানতে পারেন ১ম কমেন্টে লিংক দিয়ে দিয়েছি দেখুন!]
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, NAS - নেটওয়ার্ক এটাচড স্টোরেজ কি?
- নেটওয়ার্ক এটাচড স্টোরেজ, খুব স্বাভাবিকভাবেই বুঝাই যাচ্ছে, এটি এমন একটি স্টোরেজ, যা নেটওয়ার্ক এর সাথে যুক্ত থাকে। এটির সাথে কোনো কম্পিউটার টাইপ ডিভাইস যুক্ত রাখতে হয় যার মধ্যে কোনো অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা থাকে। এক্ষেত্রে আমরা যেকোনো পেন ড্রাইভ কে স্টোরেজ হিসেবে ধরে নিতে পারি। আর আমাদের রাউটার হচ্ছে কম্পিউটিং ডিভাইস। আর রাউটারে তো নেটওয়ার্ক আছেই।
উক্ত পুরো বিষটির উপকারিতা কি?
- ধরুন আপনার বাসায় আপনার দুইটা ফোন, দুইটা কম্পিউটার অথবা আপনার বাসার অন্যান্যদের অথবা আপনারা কয়েকজন টিম মিলে কাজ করেন। ধরুন এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে বা কম্পিউটার থেকে ফোনে কোন ডেটা বা ফাইল আদান প্রদান করতে হবে। আবার ধরুন ফোনে একটা মুভি ডাউনলোড করেছেন। কম্পিউটারে নিবেন। পেন ড্রাইভ লাগিয়ে অথবা ডেটা ক্যাবল লাগিয়ে কানেক্ট করে এভাবে ফাইল আদান প্রদান করা একটা হ্যাসেল। সময় অনেক লাগে এবং ২০২৩ সাল হিসেবে এগুলো খুবই ল্যান্দি প্রোসস। কিন্তু, আপনার সবগুলো ডিভাইস যদি একই নেটওয়ার্ক/রাউটারে কানেক্ট থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার রাউটারে একটি মেমোরি কার্ড বা পেন ড্রাইভ বা হার্ড ড্রাইভ লাগিয়ে সেটায় পার্সোনাল NAS বানিয়ে বা ক্লাউড স্টোরেজ বানিয়ে নিলে ব্যস! ওই পার্সোনাল রাউটারের স্টোরেজেই সবাই ডেটা রাখতেও পারবে আবার ডেটা নিতেও পারবে। নেই বার বার পেন ড্রাইভ ঢুকানো, ক্যাবল ঢুকানো ঝামেলা। পুরো জিনিসটাই ওয়্যারলেস।
কিভাবে বানাবেন?
- রাউটারে যদি ইউ-এস-বি পোর্ট থাকে, তাহলে সেটায় আপনার কাছে থাকা হার্ড ড্রাইভ বা পেন ড্রাইভ লাগিয়ে রাউটারের এডমিন প্যানেলে লগিন করলে দেখবেন USB Sharing, USB Setting, FTP, Storage, এই ধরনের যেকোনো একটা অপশন থাকবে। একেক রাউটারে একেক রকম থাকবে। কিন্তু, জেনারাল কাজ সবগুলোর একই। ঘুরেফিরে সব ই ৯৯% একই রকম হয়। অন্য নাম ও থাকতে পারে। একটু মাথা খাটিয়ে দু'মিনিট ঘেটে দেখুন।
- USB সেটিং হতে ডিস্ক/স্টোরেজ ইনেবল করে দিলেই আপনি আপনার রাউটারের এডমিন প্যানেলের যে আইপি বা গেটওয়ে, সেটাই যেকোনো FTP অ্যাপ এ দিয়ে, রাউটারের ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড দিলেই ব্যস, খুলে যাবে ওই পেন ড্রাইভ টা যেকোনো কম্পিউটার বা ফোনে। অর্থ্যাৎ, আপনার রাউটারের গেটওয়ে আইপি - তথা যে আইপিতে ঢুকে আপনি রাউটারের প্যানেলে ঢুকেন, ওটাই হচ্ছে আপনার বানানো ওই FTP সারভার বা ক্লাউড স্টোরেজ এর আইপি। আর ইউজার পাসওয়ার্ড হচ্ছে আপনার রাউটারের টাই। আবার, বিভিন্ন রাউটারে স্টোরেজ ফিচারের জন্য আলাদা ইউজার পাসওয়ার্ড ক্রিয়েট করার ও সিস্টেম রয়েছে। একটু ঘেটে দেখলেই বুঝবেন। খুবই সহজ জিনিস।
- এন্ড্রয়েড ফোনে যেকোনো ফাইল ম্যানেজার অ্যাপে গেলেই FTP, Network, Cloud এসব নামের অপশন আছে। একই নিয়মে সেখানে রাউটারের আইপি আর ইউজার পাসওয়ার্ড দিলেই খুলে যাবে ফোনেও। তারপর আপনি চাইলে ফোনের ফাইল ম্যানেজার থেকে সেখানে ফাইল রাখতে পারবেন আবার ফাইল নিতেও পারবেন। আপনার ফোনের ফাইল ম্যানেজার অ্যাপে যদি FTP, Network, Cloud এসব অপশন না থাকে, কোন সমস্যা নেই। আপনি প্লে স্টোরে গিয়ে FTP File Manager লিখে সার্চ দিলে লাখ লাখ এপ্লিকেশন পাবেন। সুন্দর দেখে যেকোন একটা নামালেই হবে। সবগুলার কাজ একই। একবার সেট করে নিলেই হবে। বার বার করতে হয়না।
- কম্পিউটারে এটিকে স্টোরেজ হিসেবে এড করতে চাইলে This PC তে গিয়ে উপরে এড্রেস সেকশনে আইপি দিলেই খুলে যাবে অথবা This PC/My Computer এ গেলে উপরের দিকে File - Computer - View অপশন থেকে Computer > Map A Network/Drive/Storage যেকোনো অপশন সিলেক্ট করে ওই রাউটারের আইপি বাসিয়ে ইউজার পাসওয়ার্ড দিলেই খুলে যাবে। প্রথমবার সেট করে নিলেই হবে। তারপর থেকে আপনি আপনার মাই কম্পিউটারে গেলে অন্যান্য ডিস্কগুলা/স্টোরেকগুলার নিচেই নেটওয়ার্ক স্টোরেজ নামে এটাও শো করবে।
তারপর যখন ইচ্ছা কম্পিউটার থেকে সেখানে ফাইল রাখুন, ফোন থেকে সেটা একসেস পাবেন। আবার ফোন থেকে ফাইল রাখলে ওখানে একসেস পাবেন। নেই আর কোন পেন ড্রাইভ লাগিয়ে কপি পেস্ট করে গুতাগুতির ঝামেলা। জাস্ট কপি করে নেটওয়ার্ক স্টোরেজে পেস্ট করেন। তারপর অন্য ডিভাইসে সাথে সাথে একসেস নিন সহজেই। লাইফ জিঙ্গালালা!
কিন্তু, এতো কাহিনী করার কী দরকার? গুগল ড্রাইভ ইউজ করলেই তো হয়। এতো কষ্টের দরকার আছে?
- গুগল ড্রাইভ ইউজের জন্য তো পয়সা দিতে হবে, তাইনা? তাছাড়া ধরুন আপনার একাউন্ট হ্যাক বা লিক হলো। একাউন্ট কোনো কারণে গুগল ব্লক করে দিলো। তখন আপনার ডেটা কই খুঁজে পাবেন? আর গুগল ড্রাইভ ইউজ করলে অতিরিক্ত স্টোরেজ এর জন্য আপনাকে মাসে মাসে টাকা দিতে হবে। কিন্তু, ন্যাস ইউজ করলে একবার খরচ করলেন। তারপর তো সারাজীবন আর খরচ লাগছেনা। আপনি একটা ২ টেরাবাইট এর হার্ড ড্রাইভ কিনে নিতে পারবেন ৪-৫ হাজারেই। ২ টেরাবাইট আপনার আদৌ লাগবে? আপনি ৩২ জিবির একটা পেন ড্রাইভ লাগিয়ে নিন। অকেজো পেন ড্রাইভ ও লাগিয়ে কাজ চালাতে পারেন।
- আরেকটা কথা, গুগল ড্রাইভে ফাইল আপলোড ডাউনলোড দিতে আপনার ইন্টারনেট লাগবে। বড় ফাইল আপ দিতে ডাউনলোড দিতে টাইম লাগবে। বাট এটা পুরোটাই আপনার নিজস্ব ডিভাইসেই। এখানে ইন্টারনেট এর কাজ নেই।
এরকম ছোট ছোট বিভিন্ন বিষয় আপনার কাজকর্মকে অনেক সহজ এবং এফিশিয়েন্ট করে তুলতে পারে। সেই সাথে আপনার অনেক সময় ও বাঁচাবে। এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সহজ টেকনোলজিগুলো আমরা দেখেও, দেখিনা। এড়িয়ে যাই। কিন্তু, বেশিরভাগ সময় ই এগুলোর প্রোপার ইউজার আমাদের লাইফকে অনেক সহজ করে তুলতে পারে।
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। মানুষ মাত্রই ভুল। আমারো ভুল হতে পারে কোথাও। ধন্যবাদ ❤️
Rate This Article
Thanks for reading: ওয়াইফাই রাউটারের USB পোর্ট এর গোপন ফিচার , Stay tune to get latest Blogging Tips.